ঢাবির অনলাইন পরীক্ষা- ভীতি, বিভ্রান্তি আর দুশ্চিন্তা
মুহাম্মদ ইমাম-উল-জাননাহ
টার্ম, টিউটোরিয়ালের পর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষের আটকে থাকা ফাইনাল পরীক্ষাগুলোও নেওয়া হচ্ছে অনলাইনেই। এর আগে বেশ কয়েকবার সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েও শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা নেয়া হয়ে উঠেনি।
সশরীরে নেওয়ার পরিবর্তে তাই অনলাইন মাধ্যমে পরীক্ষা নিতেই বিভাগগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ উদ্দেশ্যে অনলাইন পরীক্ষা পদ্ধতি সংক্রান্ত নির্দেশিকা এবং ভিডিও টিউটোরিয়াল প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, কোভিড-১৯ এর কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)।
অনলাইন পরীক্ষাগুলো জুম এবং গুগল ক্লাসরুমের মাধ্যমে ক্যামেরা অন করে নেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে দেওয়া হয়েছে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস। পরীক্ষার সময় এবং নাম্বারও অনেকাংশে কমিয়ে আনা হয়েছে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে বিভাগ ও ইনস্টিটিউটগুলোকে নিজ নিজ পরীক্ষাগুলো অনলাইনে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যদি চায় তাহলেই বিভাগুলো পরীক্ষা নিতে পারবে। ইতোমধ্যে আমদের নীতিমালাও পৃরকাশ হয়েছে। এবং এই নীতিমালা অনুযায়ী বিভাগগুলো পরীক্ষাও নিচ্ছে। আশা করছি পর্যায়ক্রমে সকল বিভাগ অনলাইন পরীক্ষার আওয়াতায় আসবে। আর আমাদের শিক্ষার্থীরা কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পারবে।
আপাত দৃষ্টিতে আটকে থাকা পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি শিক্ষার্থীদের জন্য স্বস্তির কারণ বলে মনে করা হলেও, ভীতি কাজ করছে অনেকের মধ্যেই। রয়েছে পরীক্ষার দুই-তিন দিন আগেও রোল, এডমিট কার্ড না পাওয়ার গুরুতর মতো বিষয়ও। রিএডমিশন বা ইমপ্রুভমেন্ট দিতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদেরকে মুখোমুখি হতে হচ্ছে আরও অনেক জটিল পরিস্থিতির !
এছাড়া, পরীক্ষা সংক্রান্ত সিদ্ধান্তসমূহের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিভাগ ভিত্তিক বেশ কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হচ্ছে৷
আধুনিক ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউটের একজন শিক্ষক জানান, আমাদের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থান করা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি। কয়েকজন শিক্ষার্থী ডিসকানেক্ট হলে তাদেরকে আবার সুযোগ দেওয়া হয়েছে এবং তাদের জন্য অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য সব ধরনের অপশন রেখেছিলাম।
শিক্ষকদের এরূপ বক্তব্য যতটা আশ্বস্ত করে, শিক্ষার্থীদের মতামত শুনলে তার চেয়ে অনেক বেশি বিভ্রান্ত হতে হয় !
করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় ;- পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে ব্যর্থ হলে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে, কর্তৃপক্ষের দেওয়া আশ্বাস অনুযায়ী পরবর্তীতে কী পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া হবে, এ বিষয়ে জানতে চেয়ে তিনজন শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সুরাহা না হওয়ায় রীতিমতো হতাশ হয়েছেন এক শিক্ষার্থী ! বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সুপরিচিত ফেসবুক গ্রুপে এমনটি জানান তিনি। অবশেষে বিভাগের চেয়ারম্যান বরাবর ইমেইল পাঠিয়েও (তখন পর্যন্ত) কোনো রিপ্লাই পাননি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
অন্যদিকে একজন শিক্ষক কর্তৃক প্রদত্ত ইমেইল এ দেখা যায়, পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে না পারলে পরের বছর জনৈক শিক্ষার্থীকে রিএডমিশন নিতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এই বিষয়টির উল্লেখ করে,নিজের ক্ষেত্রেও এরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে বলে হতাশা প্রকাশ করেন ফেসবুক গ্রুপে পোস্টদাতা, জবাবা না পাওয়া ঐ শিক্ষার্থী।
এদিকে, ৪ আগষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট সংক্রান্ত একটি ফেসবুক গ্রুপে একজন শিক্ষার্থী জানান, আইন বিভাগে ইমপ্রুভমেন্ট দিতে ইচ্ছুক একজন শিক্ষার্থীকে আগামীকাল (৫ আগষ্টের) মধ্যে জরিমানা হিসেবে ১০ হাজার টাকা জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, অন্যথায় তাকে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হবে না ! রেজিস্ট্রার ভবন থেকে তাকে এরূপ নির্দেশনা দেওয়া হয় !
উল্লেখ্য, ৮ আগষ্ট থেকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ! কর্তৃপক্ষের এমন বিমাতাসুলভ আচরণে ক্ষুব্ধ সকলেই। তবে শিক্ষার্থীরা দুঃখের সাথে এটাও উল্লেখ করেন যে ঢাবি কর্তৃপক্ষের আচরণ বরাবরই এরকম, এতে নতুন করে অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই।
জাতি গঠনের কারিগর, মহান শিক্ষকদের কাছে তাই প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করে, এই হতাশাগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের নিয়ে দেশ কতদূর এগোবে ? কী করে তারা একটি সুন্দর সমাজ উপহার দিবে, নিজেরাই যারা জীবনভর অসুন্দরের অভিজ্ঞতা মাথায় করে বয়ে বেড়াচ্ছে ?
উপরের শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের ন্যায়, হয়তো নিরুত্তর থেকে যাবে প্রশ্নগুলোও !
শিক্ষার্থী:আইন বিভাগ,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।